পরী (পর্ব - ১)
ইদানীং আমার কেনো জানিনা মনে হয় আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি আমার দেহ শূন্যে ভেসে থাকে..
কিন্তু আমি যখন চোখ মেলে তাকাই তখন আমি নিজেকে বিছানাতেই অনুভব করি..
তবে আমি এটা নিশ্চিত আমি ঘুমের মধ্যে শূন্যে থাকি..
গত কয়েকদিন ধরেই আমার এমনটা মনে হচ্ছে..
তবে কেনো এমন মনে হচ্ছে সেটা জানিনা..
ভাবছি ডাক্তার দেখাবো..কিন্তু অফিসে এতো কাজের চাপ থাকে যার কারণে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না
তবে আমি লক্ষ্য করেছি আর হাতে পিঠে আচড়ের দাগ থাকে..
আমি আম্মুকে দেখিয়ে বলেছিলাম
আম্মু বলছিলো যে আমি নিজেই নাকি আছড়েছি
পরদিন সকালে উঠে গোসলে গেলাম..
ঘাড়ের কাছে পানি যেতেই সেখানে জ্বালা শুরু হয়ে গেলো..
কিন্তু কেনো জ্বালা করছে আমি সেটাও বুঝতে পাড়ছি না..
আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম
দেখলাম আজকেও আচড়ের দাগ হয়ে আছে.?
একদম নতুন দেখাই যাচ্ছে এখনো লাল হয়ে আছে..
আমার একদম স্পষ্ট মনে আছে কাল কোথাও কোনো ক্ষত ছিলো না আমার কিন্তু হঠাৎ কি হয়েছিলো
নাহ আম্মুকে বলতেই হবে।
আমি তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে আম্মুর কাছে গেলাম..
আমিঃআম্মু তোমাকে তো বলেছি আমার শরীরে নিজে থেকেই ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তুমি তা বিশ্বাস করতেইই চাচ্ছ না..এই দেখো আম্মু আমার ঘাড়ে আবার নতুন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে.
আম্মুঃকই দেখি দেখি
আম্মুকে দেখালাম..
আমিঃআম্মু আমার খুব ভালো করে মনে আছে
আমি কাল রাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলাম আমার কোথাও ক্ষতের কোনো চিহ্ন ছিলো না..
আম্মুঃআমারো কেনো জানি মনে হচ্ছে এটা কোনো রোগের লক্ষন,,,তুই এক কাজ করিস আজকে অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসিস।
আমিঃহুম আম্মু আমিও তাই ভাবছি
আচ্ছা আম্মু আমি উপরে যাচ্ছি রেডি হতে তুমি আমার খাবার রেডি করে রাখো
আমি উপরে এসে রেডি হয়ে নিলাম..
খেয়ে অফিসের উদেশ্যে বেড়িয়ে গেলাম.
সোজা বসের কাছে গেলাম..
বসঃকি ব্যাপার কোনো সমস্যা?
আমিঃহুম স্যার আমি আজকে একটু ডাক্তারের কাছে যাবো।।
দুপুরের পর আমার ছুটি লাগবে..
বসঃকিন্তু অফিসে এতো কাজ কি করে ছুটি দেই..
আমিঃআজকে আমার ছুটি লাগবেই
না হলে বড় কোনো সমস্যা হয়ে যেতে পারে আমার..
বসঃআচ্ছা ঠিক আছে তবে কাজ গুলো একটু গুছিয়ে তারপর গেলে ভালো হয়..
আমিঃহুম ধন্যবাদ স্যার..
আমি আমার কাজ করতে লাগলাম.
দুপুরে স্যারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আমি বেড়িয়ে পড়লাম
ডাক্তাররের কাছে গিয়ে সব বললাম..
ডাক্তার বললো সে নাকি এমন কথা আগে কোনো দিন শুনেনি।।
ডাক্তার বললো এর জন্য কোনো চিকিৎসা দিতে পারছি না..
তবে একটা মলম লিখে দিচ্ছি ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিতে বললো.
আমার এই রোগের নাকি কোনো চিকিৎসা নেই শুনেই মাথায় চিন্তা ভর করলো..
তাহলে কি আমি মারা যাবো..তার জন্যই কি আমারর সাথে এমন হচ্ছে আমার দিন কি শেষ হয়ে এসেছে নাকি..
একরাশ চিন্তা নিয়ে বাসায় ফিরলাম..
আম্মুঃকিরে মামুন তোর মুখ অমন দেখাচ্ছে কেনো?
আর তুই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলি?
আমিঃহুম আম্মু গেছিলাম আর ডাক্তার বলে দিয়েছে আমার এই রোগ সম্পর্ক সে আগে থেকে অবগত নই
মেডিকেল সাইন্সে নাকি এমন রোগের কথা কোথাও উল্লেখ নেই..
আম্মুঃআচ্ছা মামুন তুইই কি সিউর ক্ষত গুলো নিজে থেকে তৈরি হয়..আর শুধুমাত্র রাতেই সৃষ্টি হয়?
আমিঃহুম আম্মু আমি একদম সিউর যা হয় আমারর সাথে রাতেই হয়
আম্মুঃআচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি দেখছি কি করা যায়..
আমি রুমে চলে গেলাম..
চারিদিক একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম
নাহ সব কিছুই ঠিক ঠাক..
তবে রাতে আমার কেনো মনে হয় আমি শূন্যে ভেসে থাকি..
নাহ আজকে আর ঘুমাবো না রাত জেগে থাকবো আর দেখবো আমার সাথে কি হয়.
আমি সেদিন রাতে আর ঘুমালাম না।
কই আজ তো আমার সাথে কিছুই হলো না..
তাহলে কি আমি কোনো স্বপ্ন দেখি.
হতেই পারে স্বপ্ন তারপরের দিন আমি যথারীতি ঘুমিয়ে গেছি।
কিন্তু মাঝরাতে আমার আবার মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভেসে আছি.আমি এইবার পুরো চোখ না মেলে হালকা একটু খুলে দেখি আমি সত্যি বিছানায় নেই..
শূন্যে ঝুলে আছি..আর আমার সারারুম একদমম উজ্জ্বল করছে
আর এতোটাই উজ্জ্বল যা দিনের আলোকেও হার মানিয়ে দিবে.
আমার খুব ভয় হচ্ছে আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা কোনো এক অশরীরী আত্না আমার পেছনে লেগেছে..আমার গা ঘামতে লাগলো..
তখন একটা অদৃশ্য আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো..
ভয় পেও না আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।
এইবার ভয় চরম মাত্রায় পৌছে গেলো..
আমি চোখ খুললাম আজকে আমি শুন্যেই
ভেসে আছি.
তবে রুমটা উজ্জ্বল ছিলো উজ্জ্বল আছে
আমিঃআমার রুমে কে?
সামনে আসুন কেনো আমার সাথে এমন শুরু করছেন?
আবারো অদৃশ্য যেই বানি
তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো বলছি তো আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না,,আর আমি সামনে আসলে তুমি পাগল হয়ে যাবে..
আমিঃকেনো আমি পাগল হবো কেনো?
কারণ আমার রূপের মাধুর্য দেখেই পাগল হয়ে যাবে..
আমিঃনাহ আমি আপনাকে দেখবো।।
আর আমি এটাও জানবো আপনি আমার সাথে কেনো এমনটা করছেন?
কেনো করছি তার পেছনে অনেক বড় কারণ আছে..
আমিঃআচ্ছা আপনি যেই হোন না কেনো
আমার রুমে কেনো এসেছেন আব্বু আম্মু জানলে বিপদ হয়ে যাবে..
আমি যাকে দেখা দিবো শুধু সেই আমাকে দেখতে পাবে বাকি কেও আমাকে দেখতে পাবে না..
আমিঃআচ্ছা আপনি আমাকে দেখা দিন আর আমার প্রশ্নের উত্তরর দিন
আচ্ছা দেখা দিচ্ছি তবে একটা কথা যা না মানলে
তোমার চরম ক্ষতি হয়ে যাবে
আমিঃক্ষতি মানে আমার কি ক্ষতি হবে.
তোমার আব্বু আম্মুকে হারাতে হবে
আমিঃনা না আমি কাওকে কিছুই বলবো না আপনি শুধু আমাকে দেখা দিন..
আমাকে নামিয়ে দিলো আমি বসে পড়লাম.
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আমার ঠিক সামনে চেয়ারে একটা মানুষ দৃশ্যমান হচ্ছে
আস্তে আস্তে তার পুরো শরীর দৃশ্যমান হয়ে উঠলো..
সত্যি আমি পাগল হবার মতো অবস্থায় চলে গেলাম..
এইরকম অপরূপা সুন্দরী আমি এরর আগে কখনো দেখিনি
তার শরীর থেকে জেনো আলো ঝড়ছে
আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে
কি হলো অমন করে তাকিয়ে কি দেখছ?
আমিঃনাহ কিছু না,,আচ্ছা আমার মনে হচ্ছে
আপনি সাধারণ কোনো মানুষ না
হুম আমি সাধারণ কোনো মানুষ না
আমি পরী রাজকুমারী
মানে পরি রাজকুমারীর মানে কি
মানে হলো আমি পরী লোকের রাজা আর রানীর একমাত্র মেয়ে
আমিঃতাহলে পরী লোক ছেড়ে আমার ঘরে কি করছেন
আচ্ছা সব বলছি
তুমি তো কিছুদিন আগে তোমার গ্রামের বাড়িতে গেছিলে তাই না?
আমিঃহুম গেছিলাম তো..
তোমাদের বাসার পেছনে একটা বাশ ঝাড় আছে তাই না?
আমিঃহ্যা আছে তো
সেই বাশ ঝাড়ের ঠিক মাঝ যায়গায় এককটা রক্ত জবা ফুল গাছ আছে
আমিঃহ্যা আছে আর গাছটা অনেক ভয়ংকর
অনেক মানুষ মারা গেছে অই গাছ স্পর্শ করার সাথে সাথে
আমার কৌতুহল ছিলো এই বিজ্ঞানের যুগে এইসব কুসংস্কার কেও বিশ্বাস করে
তাই আমি ফুল ছিঁড়ছিলাম কইই আমার তো কিছু হলো না
এইতো আমি দিব্যি বেচে আছি..
কেনো বেচে আছো তুমি জানো?
আমিঃআয়ু আছে তাই আমি বেচে আছি
নাহ শুনো এর পেছনের রহস্য
আমার যখন জম্ম হয়েছিলো
আমার দাদা মশাই বলেছিলো
আমাকে সেই পাবে যে গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করতে পারবে
আমি একটু মজা করে বললাম তাহলে তো আমার কিছু হয়নি চলেন বিয়ে করি
হ্যা তার জন্যইই তো এখানে আসা
তোমাকে আমার সাথে পরীলোকে যেতে হবে
আমিঃকেনো পরীলোকে কেনো যাবো?
এটাই নিয়ম আমাদের পরীদের যাদের ভালো লাগে তাদেরকে আমরা পরীলোকে নিয়ে যাই
আর সারাজীবন সেখানেই থাকতে হয়
পরীর কাছে এমন কথা শুনে আমি হতবাক তার মানে কি আমাকেও যেতে হবে
চলবে....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন