পরী (পর্ব - ৮) শেষ
কি এখনো কি জ্বালা করছে তোমার?
জিনিয়াঃনাহ একদম সেরে গেছে
আমিঃআচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে নাও.তারপর খেতে হবে
জিনিয়াঃআমি এখন কিছুই খেতে পারবো না,,
আমিঃখেতে পাড়বে না বললে তো হবে না
জিনিয়াঃউফফ ভালো লাগে না,,আর কতদিন লাগবে বাচ্চা হতে?
আমিঃওমা তুমি জানো না কিছু?
জিনিয়াঃআমি কি করে জানবো মানুষের বাচ্চা কতদিনে হয়
আমিঃ১০মাস লাগে
জিনিয়াঃহায় আল্লাহ এতোদিন আমি থাকবো কিভাবে
আমিঃথাকবা কিভাবে মানে?
জিনিয়াঃআমি এতোদিন তোমার সাথে থাকতে পাড়বো না
আমিঃকেনো আমি আবার কি করলাম?
জিনিয়াঃঅনেক কিছুই করেছ নাহ তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই,,আমি গোসলে গেলাম..
জিনিয়া গোসলে চলে গেলো,
কিছুক্ষণ পর জিনিয়া বের হলো..
জিনিয়াঃকি হলো অমনভাবে বসে আছ কেনো?যাও তুমিও গোসল করে নাও
আমিঃকরবো তার আগে আরো একবার খাবো
জিনিয়াঃকি খাবা?
কোনো প্রতিউত্তর না দিয়েই আবারো চার ঠোট এক করে দিলাম
জিনিয়া এইবার একটু তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো./
আমিঃকি হলো ছাড়িয়ে নিলে কেনো?
জিনিয়াঃবারবার হচ্ছে কি আমার সাথে?
আমিঃকেনো বুঝো না,,তখন তোমার ঝাল কমাতে গিয়ে আমার ঝাল লেগে গেছিলো তাই এইবার নিজের ঝাল কমিয়ে নিলাম
জিনিয়াঃতবেরে দেখাচ্ছি মজা এইবলে আমার দিকে তেড়ে আসলো আর আমি টুপ করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম..
দিন গুলো কেটে যেতে লাগলো..
দেখতে দেখতে সেই কাক্ষিত সময় চলে আসলো
মানে যে কোনো দিন ব্যাথা উঠতে পারে সব কিছুই প্রস্তুত আছে
আমারর সব সময় টেনশন থাকে কখনন বাসা থেকে ফোন আসে,,আর জানিনা বাচ্ছা হবার পর জিনিয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা,,
এই কয়েকমাসে যা দেখেছি জিনিয়ার এইই বাচ্চার প্রতি কোনো মায়া নেই,,থাকলে এতো অযত্ন করতো না,
এখন ও পথিবীতে আসলে কি হয় তাই দেখায় বিষয়
আম্মু জিনিয়াকে কোনো কাজ করতে দেয় না,,
সব সময় জিনিয়ার সাথেই থাকে,,
রাতে ঘুমিয়ে
ছিলাম,,তখন হঠাৎ জিনিয়া পাশ থেকে ডেকে বলে
মামুন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সহ্য করতে পাড়ছি না,,
আমিঃকি বলো হঠাৎ করেই কি এতো ব্যাথা?
জিনিয়াঃনা আমার ব্যাথা বিকাল থেকেই একটু একটু কিন্তু এখনন বেড়েছে সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে
আমি আব্বু আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসলো..
আম্মুঃওর অবস্থা ভালো না এম্বুলেন্স ডাক..
এম্বুলেন্স আনা হলো জিনিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম..
রাত ১টার দিকে ডাক্তার এসে খবর দিলো আমি কন্য সন্তানের বাবা হয়েছি..
শুনেই আনন্দে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো.
ডাক্তার এটাও বলে গেলো মা মেয়ে দুজনি সুস্থ আছে..
কিছুক্ষণ পর বেডে দেওয়া হবে
রাত ৩টার দিকে ওদের বেডে দেওয়া হলো..
বাচ্চার নামকরণ করা হয়নি
আম্মুঃবউমা ও তো কান্না করছে নাও একটু বুকের দুধ খাওয়াও
জিনিয়াঃআমি কিছু খাওয়াতে পারবো না,,
আপনার ছেলেকে তো আমি আগেই বলে দিয়েছি বাচ্চা হলেই আমি ওদের ছেড়ে চলে যাবো..
আপনাদের বংশের মেয়েকে এনে দিয়েছি এইবার আমার ছুটি
আম্মুঃছিঃ এইসব কি কথা বলছ,,আর ও তো এইটুকু একটা শিশু না খেলে মারা যাবে
জিনিয়াঃমারা গেলে যাবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না,,
আমি এতোক্ষন জিনিয়ার কথা চুপচাপ শুনছিলাম
বাচ্চার কান্না আমার আর সহ্য হচ্ছে না,,
আমি জিনিয়ার পাশে বসে
এই প্লিজ এমনভাবে বলো না
ও তো তোমারো সন্তান
জিনিয়াঃনা ওহ আমার কিছুই না যাও ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও
আমিঃআচ্ছা তুমি তো ছেড়ে যাবে ঠিক আছে,কিন্তু এতোদিন যখন ছিলে আর কয়েকটা দিন নাহয় থাকো,,আর সব সময় খাওয়াতে হবে না প্রথম ১৫দিন খাওয়ালেই হবে
জিনিয়া;আচ্ছা দাও কিন্তু ১৫দিন পরে কিন্তু আমি আর খাওয়াবো না
এই বলেই অন্যপাশে ঘুরে বাচ্চাকে খাওয়াতে লাগলো..
খেতে খেতে ঘুমিয়ে গেছে
এই নাও তোমার বাচ্চা ঘুমিয়ে গেছে এইবার ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও
আমিঃএই তোমার এই বাচ্চার উপর এতো রাগ
কেনো?যদি কোনো রাগ থাকে আমার উপর দেখাও ও তো অবুঝ একটা শিশু
জিনিয়াঃআমি যা বলছি কান দিয়ে গেছে কিনা,,আর যদি ওকে এখান থেকে নিয়ে না যাও এরপর থেকে কিন্তু আর কিছুও খাওয়াবো না
বাধ্য হয়ে নিয়ে যেতে হলো
বাচ্চার নাম রাখা হলো ঝুমুর
আমি আব্বু আম্মু ঝুমুরকে নিয়ে বাইরে চলে আসলাম
হাসপাতালের ডাক্তাররা জিনিয়ার এইসব কান্ড দেখে অবাক..
৪দিনের দিন জিনিয়া ও ঝুমুরকে বাসায় নিয়ে আসলাম..
জিনিয়া শুধু সকাল আর রাতে ঝুমুরকে ওর বুকের দুধ খাওয়াই
আর বাকি সময় কেনা দুধ খাওয়াতে হয়,,যদিও ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই তবুও মায়ের দুধের বিকল্প কিছু হয়না..
ঝুমুরের সব কিছু আম্মু ই দেখা শোনা করে
জিনিয়া এক মিনিটের জন্যেও ঝুমুরকে কোলে নেয়নি।
১মাস কেটে গেছে
ঝুমুরের প্রতি অবহেলা অনেকটাই বেড়ে গেছে
আমি সারাদিন অফিসে থাকি সব কিছু আম্মু আর আব্বু করে
এই ঝুমুর কান্না করছে নাও না একটু কোলে নাও না
জিনিয়াঃআমি পাড়বো না,,আর তুমি কেমন বাবা নিজের মেয়েকে শান্ত রাখতে পারো না,,
আমিঃশান্তই তো থাকে,,হয়তো ক্ষুধা লেগেছে তাই কান্না করছে
জিনিয়াঃতো আমি কি করবো যেইভাবে পারো কান্না থামাও
আমিঃআম্মু তো বাসায় নাই,,আর দুধ করা নেই,,
একটু বুকের দুধ খাওয়াও না
জিনিয়াঃপাড়বো না আমি
আমিঃপ্লিজজ দেখতেই তো পাড়ছে মেয়েটা কিভাবে কান্না করছে
জিনিয়াঃশুধু কান্না কেনো মরে গেলেও কিছু যায় আসে না,,
আমিঃসত্যি যদি আমাদের মেয়েটা মারা যায় তোমার কিছুই যাবে আসবে না
জিনিয়াঃনাহ যাবে আসবে না,,
আমিঃতাহলে এইনাও ওকে নিজের হাতে মেরে ফেলো তবুও এতো কষ্ট দিও না
জিনিয়াঃও মারা গেলে তো আমার আবার পরী হবার সব আশা শেষ হয়ে যাবে
আমিঃতাহলে এই ব্যাপার আচ্ছা তুমি আবার পরী হতে চাও তাই তো?
জিনিয়াঃহ্যা পরী হতে চাই
আমিঃআচ্ছা ঠিক আছে আজকেই আবার তোমাকে পরী করে দিবো অপেক্ষা করো..
জিনিয়ার ফের পরী হবার একমাত্র উপায় হলো আমার আর জিনিয়ার রক্ত একসাথে পান করা,,
আমি একটা ছুড়ি নিয়ে আসলাম..
জিনিয়াঃএই তুমি ছুড়ি দিয়ে কি করবে?
আমিঃতোমাকে আবার পরী হতে সাযাহ্য করবো,,
আমাদের রক্ত খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও
আমি ছুড়ি দিয়ে প্রথমে আমার হাতের শিরা কেটে নিলাম
কিন্তু মেয়ে টা কিভাবে কাটবো না আমি পারবো না
না পারতেই হবে আজকে বাপ মেয়ে একসাথে মারা যাবো,,তবুও এইভাবে ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না,,
আমি চোখ বন্ধ করে ঝুমুরের আঙুল এর কিছু অংশ কেটে দিলাম,,এতোক্ষন কান্না করছিলো এইবার কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো,,
আমিও কান্না করে দিয়েছি
আমিঃনাও বসো আমাদের দুজনের রক্ত একসাথে পান করে পরী হয়ে নিজের মন বাসনা পূরণ করো ইচ্ছা ছিলো আমার রক্ত পান করার বোনাস হিসাবে আমার মেয়ের রক্ত খাও
আমার হাত থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে
জিনিয়া হাটু গেড়ে বসলো
আমি আমার হাতের সাথে জিনিয়ার আঙুল একসাথে করে দিলাম জিনিয়া হা করে বসে আছে
যেই রক্ত ওর মুখের ভেতর যাবে তার আগেই ও মুখ বন্ধ করে নিলো রক্ত দিয়ে ওর মুখ মেখে যেতে লাগলো..
আর বসে না থেকে ঝুমুরকে আমার কোল থেকে নিয়েই বুকে জড়িয়ে
মা আমার কাদে না,,আব্বু অনেক পচা তোমাকে ব্যথা দিয়েছে কাদে না মা কাদে না,,এই তো আম্মু আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবে না,,মায়ের কোলে যাবার পরেই ঝুমুরের কান্না বন্ধ হয়ে গেছে,,
আমিঃকি হলো রক্ত পান করলে না
জিনিয়াঃকিভাবে পান করবো?যে কিনা আমার রক্ত দিয়েই তৈরি হয়েছে তার রক্ত কিভাবে পান করবো,,আর যার সাথে আমার জোড়া আগে থেকেই লেখা আছে তার রক্ত পান করলে পাপ হবে পাপ
পাড়লাম না আমি
জিনিয়া ওর কাপড় ছিঁড়ে ঝুমুরের হাতে বেধে দিলো
আমিঃবাহ মেয়ের প্রতি ভালোবাসা জম্ম নিলো আরেকজনের কথা ভুলে গেলে?
জিনিয়াঃঅহ হ্যা তাই তো
এরপর আমার হাত বেধে দিলো.?
আমিঃবাচালে কেনো আমাদের
জিনিয়াঃকি করবো এখন তোমরা দুজনই আমার সব
তোমাদের ছাড়া আমি শূন্য হয়ে যাবো যে
আমিঃতাহলে এতোদিন ভেবে দেখোনি
জিনিয়া'ভেবেছি বলেই তো এতোদিনে আছি
না হলে চলে যেতাম,
আমিঃএখন মেয়েকে দেখবে তো মায়ের সব দায়িত্ব পালন করবে তো?
জিনিয়াঃশুধু মায়ের না একজন বউয়ের একজন পুত্রবধূরর সব দায়িত্ব আজ থেকে পালন করবো
তবে আমার একটা শর্ত আছে?
আমিঃআবার কি শর্ত
জিনিয়াঃঝুমুর যখন আমার পেটে ছিলো আমাকে যেইভাবে ভালোবাসতা খেয়াল রাখবা তেমন ভালোবাসা দিতে হবে
আমিঃআচ্ছা ঠিক আছে দিবো
জিনিয়াঃআরো একটা আছে
আমিঃআবার কি
জিনিয়াঃআব্বু আম্মুকেও মানুষ করতে হবে
আমি ঝুমুর এর রক্ত রেখেছি
এখন আব্বু আম্মুকে খাওয়ালেই হয়ে যাবে
আমি;কিন্তু তাদের পাবো কই?
জিনিয়াঃআগামী আমাবস্যায়য় তাড়া আসবে
আমিঃআচ্ছা কিন্তু খাওয়াবো কিভাবে?
জিনিয়াঃতুমি বলবে রক্ত জবা ফুলের রস আমার আব্বু আম্মুর খুব প্রিয় তাহলেই খেয়ে নিবে
দেখতে দেখতে আমাবস্যা চলে আসলো আমার শশুর আব্বা আর শাশুড়ি আম্মা আসছে দেখা করতে
জিনিয়ার কথা মতো তাদের হাতে ঝুমুরের রক্তের কাপ দিয়ে বললাম
রক্ত জবা ফুলের রস খেয়ে নিন অনেক সুস্বাদু
খাবার পর শশুর আব্বা অনেক খুশি কারণ তার মনন বাসনা পূরণ হলো
কিন্ত্ শাশুড়ি আম্মা রেগে আগুন
সে চলেই গেলো
শশুর আব্বা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বউয়ের পিছু পিছু গেলো
এরপর থেকে শাশুড়ি আম্মা আমাকে একদম দেখতে পারেনা যদিও ঝুমুর তাদের প্রান হয়েই দাঁড়িয়েছে
কিছু হলে আমাদের দুজনকে সেই ভাবে ঝাড়ে
এইটুকু বাচ্চাকে কেনো দেখে রাখতে পারি না
যদি বাচ্চা সামলাতে কষ্ট হয় তাদের কাছে দিয়ে দিতে তাড়া বড় করে দিবে,,আরো কত কি
পরিশেষে আমরা অনেক সুখী আছি
জিনিয়া তো নেক্সট বাবু নেওয়ার জন্য আমাকে তাগাদা দিচ্ছে আমি সাড়া দিচ্ছি না




মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন