পরী (পর্ব - ৭)


 আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পাড়ছি না,,যে আমি মানব সন্তানের মা হতে যাচ্ছি,,

আমার নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে
জিনিয়ার কথা শুনে রাগ উঠে গেলো..
আমি আর ওর সাথে কোনো প্রকার কথা না বলে
ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলাম..
আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে বাইরে চলে আসলাম
কিছুক্ষণ এদিক সেদিন ঘুরাঘুরি করে ফেরারর সময় কয়েক প্রকারের আচার কিনে নিলাম..
কারণ এই সময় নাকি মেয়েরা সব থেকে বেশি টক খেতে ভালোবাসে..
আমিঃআম্মু জিনিয়া কোথায়?
আম্মুঃবউমা তো সেই তখন থেকে রুমেই বসে আছে,,
আমিঃআচ্ছা আম্মু ঠিক আছে
আম্মুঃতোর হাতে কি?
আমিঃঅহহ আচার জিনিয়ার জন্য নিয়ে আসছি
আম্মুঃআরে বাহ ছেলে দেখা যায় আমার সব কিছুই জানে
আমি আবার জিনিয়ার কাছে এসে বসলাম..
আমিঃএই তুমি এমনভাবে বসে আছ কেনো?
জিনিয়াঃতো কি আমি সারা বাসা টো টো করে ঘুরে বেড়াবো?নাকি সারা পাড়া ঘুরে ঘুরে বলবো আমি মা হতে যাচ্ছি আমি মা হতে যাচ্ছি বলতে হবে?
আমিঃতুমি এতো রেগে যাচ্ছ কেনো?
জিনিয়াঃকই রাগলাম আমি তো শুধুমাত্র আমার মনের ভাব প্রকাশ করলাম..
আচ্ছা আমার মনের ভাব প্রকাশ করলে যদি তা তোমার কাছে রাগ মনে হয় ঠিক আছে আর কথা বলবো না
আমিঃআমার সাথে এমন কেনো করছ?যাই হোক এই দেখো তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি
জিনিয়াঃকি এনেছ আমি আবার পরী হতে পাড়বো বলো বলো?অনেক আগ্রহ নিয়ে
আমিঃনাহ আচার নিয়ে আসছি,,
জিনিয়াঃআচার দিয়ে আমি কি করবো?
একটু খেয়ে দেখো?
জিনিয়াঃনাহ খাবো না,,তোমাকে আর বিশ্বাস নেই,,
তুমি আমার ভালো চাও না,,সবব সময় আমার ক্ষতি করেই আসছ..তোমার আনা কিছুই আমি খাবো না,,
আমিঃজিনিয়া তুমি এটা বলতে পাড়লে?আমি তোমার ক্ষতি চাই,,আর তুমি কি ভুলে গেলে তোমার পেটে আমার সন্তান বড় হচ্ছে.
জিনিয়াঃএই কথা কি ভোলা যায় বলো..কিন্তু তবুও তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না,,
আমিঃআচ্ছা খেতে হবে না বলেই আমি জানালা দিয়ে
সব ফেলে দিলাম..
জিনিয়াঃবাহ ধরা খেয়ে এখন সব ফেলে দেওয়া হলো তাই না,,কি ছিলো ওর মধ্যে আমাকে মারার জন্য বিষ ছিলো তাই না..
আমি কোনো উত্তর দিচ্ছি না,,জানি আমি যাই বলি না কেনো জিনিয়া কিছুই বিশ্বাস করবে না
রাতে খাবার সময় হয়ে গেছে,,
জিনিয়া সেই তখন থেকে এক যায়গাতেই বসে আছে,,নাওয়া খাওয়া সব কিছুই ভুলে গেছে,,
আমিঃএই আর কত বসে থাকবো এইবার খেতে চলো..
জিনিয়াঃআমি খাবো না তুমি যাও..
আমিঃতোমাকে এখন থেকে নিয়মমত অনেক কাজ করতে হবে,,যার মধ্যে একটা হলো পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা,,তাই চলো আমাদের বাচ্চার ভালোর জন্য হলেও খেয়ে নিবে..
জিনিয়াঃআমাদের বাচ্চা বলবে না,,বলো তোমার বাচ্চা
আমিঃকেনো তুমি বাচ্চার মা না?
জিনিয়াঃনা আমি এই বাচ্চার কিছুই না..
আমিঃআচ্ছা আমার একারই বাচ্চা
প্লিজ খেতে চলো.তুমি না খেলে বাচ্চা খেতে পাড়বে নাতো..
এরপর জিনিয়া এক প্রকার বিরক্তিকর ভাব নিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো,,কিছুক্ষণ বের হয়ে
নিচে গেলো.
আমিও জিনিয়ার পেছন পেছন গেলাম.
মেয়েটা এতো বেশি রাগি এইরাগ কন্ট্রোল করবো কিভাবে?
আম্মু খাবার বেড়ে দিলো..
জিনিয়া খেতে লাগলো./
এমনভাবে খাচ্ছে মনে হয় অনেকদিন ধরে কিছু খায় না
তার মানে মেয়েটার ক্ষুধা লাগছিলো কিন্তু রাগের কারণে বলে নি,,আর নিজে থেকে যে এসে খাবে তাও করেনি,,আমি ব্যাপার টা বুঝলেও কিছু বললাম না
বললে যদি খাবার রেখে উঠে চলে যায়
রাতে ঘুমানোর সময়
জিনিয়া বিছানা ঠিক করে শুয়ে পড়েছে,,আমি বাইরে ছিলাম এসে দেখি ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে..
আমি ওর পাশে শুয়ে ডাকতে লাগলাম
এই তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ?
জিনিয়াঃনা কিছু বলবে?
আমিঃএকটু আমার দিকে ফিরে ঘুমাও না
জিনিয়াঃনা তোমার দিকে ফিরতে পারবো না,,
আমিঃআচ্ছা আমাদের প্রথম সন্তান কি হবে?
জিনিয়াঃআমাদের বলো কেনো?বলো তোমার প্রথম সন্তান কি হবে?আর শোন আল্লাহ যা দিবে তাই নিয়েই খুশি থাকবে..
আমিঃহ্যা যেমন আমি তোমাকে নিয়ে খুশি আছি,,
জিনিয়াঃআমি আমার কথা বলেনি,,আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাইলাম
এইভাবে দুইমার চলে গেলো..
জিনিয়া নিজের আর নিজের বাচ্চার ব্যাপারে অনেক উদাসীন
কিছুই ঠিক মত করে না,,
আম্মু বললো জিনিয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে ৩মাসে নাকি কি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়
আমিঃএই রেডি হয়ে নাও আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো..
জিনিয়াঃকেনো ডাক্তারের কাছে কেনো যাবো?
আমিঃকি নাকি পরীক্ষা করতে হয় এই সময় তোমাকে পরীক্ষা করতে নিয়ে যাবো..
জিনিয়াঃআমি যেতে পাড়বো না,,
আমিঃদেখো জিনিয়া সব ব্যাপারে কিন্তু এইভাবে না শুনতে ভালো লাগে না,,
জিনিয়াঃতোমার না লাগলে আমি কি করতে পারি বলো?
আমিঃকথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রেডি হয়ে নাও
জিনিয়াঃআমি কি বললাম তোমার কান দিয়ে যায়নি নাকি
আমি যাবো না
নাহ এইবার আর সহ্য করা যাচ্ছে না
আমি নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ঠাসসস করে জিনিয়ার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম
কি পেয়েছ শুনি সব কিছুতেই বাধা দিতে দিতে তোমার অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে
আমারি ভুল তোমার মতন মেয়েকে বিয়ে করা
আমার লাইফটাকে শেষ করে দিচ্ছ বিয়ে করেছি
কিন্তু মনেই হয় না আমার কোনো বউ আছে
জিনিয়াঃতাহলে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ?
আমিঃহ্যা পেড়েছি তবে সন্তান যেহেতে আসছে দুজনকেই মানিয়ে নিতে হবে,,
আমি যতই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি তুমি ততোবেশি বাধার সৃষ্টি করছো.
জিনিয়াঃআর কিছু বলছে না তবে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আমিঃকি হলো দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি রেডি হবে?ধমকের সুরে
জিনিয়াঃযাচ্ছি তবে কাজটা তুমি ভালো করলে না
আমিঃভালো নাকি খারাপ তা জানিনা তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এরপর থেকে মাঝে মধ্যে খেতে হতে পারে
জিনিয়াঃআমি তোমাকে দেখে নিবো..
আমিঃআচ্ছা যাও দেখো এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
জিনিয়া রেডি হতে চলে গেলো..
আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করছি
জিনিয়া রেডি হয়ে চলে আসছে হালকা একটু সাজুগুজু করছে এমনি তেই সুন্দর তবে আজকে আরোবেশি সুন্দর লাগছে
জিনিয়াঃকি হলো অমনকরে হা করে তাকিয়ে কি দেখছ চলো ডাক্তারের কাছে যাবে না
আমি লক্ষ্য করে দেখলাম জিনিয়ার গাল লাল হয়ে আছে ৫ আঙুলের ছাপ স্পর্ষ্ট বোঝা যাচ্ছে
নাহ চড়টা দেওয়া ঠিক হয়নি
আমি উঠে গিয়ে জিনিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো খুব লেগেছে তাই না?
জিনিয়াঃথাক আর আর দরদ দেখাতে হবে না,,মারার সময়য় মনে ছিলো না,,আমি ব্যথা পাবো এখন আসছে দরদ দেখাতে যাও তোমার দরদ আমার লাগবে না,,
আমিঃসরি ভুল হয়ে গেছে আসলে তুমি তো
জিনিয়াঃথাক আর বলতে হবে না,,এইবার চলো ডাক্তারের কাছে
জিনিয়াকে ডাক্তার দেখিয়ে আসার সময়
জিনিয়াঃএই আমি ফুসকা খাবো
আমিঃআচ্ছা চলো
জিনিয়াকে ফুসকার দোকানে নিয়ে গেলাম।
জিনিয়াঃমামা যতবেশি পারো ঝাল দিয়ে এক প্লেট ফুসকা দাও..
আমিঃএই তুমি না ঝাল খেতে পারো না,,
জিনিয়াঃআজকে খাবো
ফুসকা খেয়ে জিনিয়া বাচ্চাদের মতো কান্না করা শুরু করে দিয়েছে,,
আমিঃকি ব্যাপার তুমি কান্না করছ কেনো?
জিনিয়াঃতখন চড় খেয়ে কান্না করতে পারিনি তবে অনেক ভারি লাগছিলো
তাই এখন ঝাল খেয়ে কান্না করলাম
এখন নিজেকে অনেক হালকা লাগছে
আমিঃবাহ কান্না করার নতুন টেকনিক
বাসায় চলে আসছি
আম্মুঃকিরে ডাক্তার কি বললো?
আমিঃসব ঠিকঠাক আছে তবে ওর শরীরে নাকি রক্ত কম
আম্মুঃরক্ত কম হবে না,,একদম তো খাওয়া দাওয়া করে না,,একবেলা খেয়ে তার দুইবেলা খাওয়ার কোনো নামই থাকে না,,
জিনিয়াঃকি করবো আমি?আমার খেতে ইচ্ছা করে না,,তাই বলে তোমরা আমাকে এইভাবে বকা দিবে
আম্মুঃইচ্ছা না করলেও তোমাকে খেতে হবে..জানোই তো এখন তোমার মধ্যে কেও একজন বেড়ে উঠছে
জিনিয়াঃআমি রুমে গেলাম
আমিঃআচ্ছা যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেষ্ট নাও
কিছুক্ষণ পর আমিও রুমে গেলাম
ডাক্তার কি বলছে শুনলে তো?
একটু হাটাহাটি করতে হবে
সময় মতো খেতে হবে
শাকসবজি জাতীয় খাবার খেতে হবে
ছোটমাছ খেতে হবে
জিনিয়াঃতুই খাবি তুই হাটাহাটি করবি
তোর বাচ্চা তুই করবি আমি কেনো এতো কিছু করতে যাবো,,হারামি তুই জানতিস না ঝাল খেলে আমার কষ্ট হয় তবুও না করলি না কেনো?
আমিঃতুমি নিজেই তো খেতে চাইলে
জিনিয়াঃতুই না করলে তো আমি খাইতাম না,,উফফ এখনো মুখ জ্বালা করছে
একটু কাছে আসো জ্বালা কমিয়ে দিচ্ছি
জিনিয়াঃকিভাবে কমাবে?
আমি জিনিয়ার কাছে গিয়েই চার ঠোট এক করে দিলাম
জিনিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করছে
জিনিয়া আমার ঠোটে এমনভাবে কামড় দিলো আমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম
আমিঃকি এখনো কি মুখ জ্বালা করছে?
জিনিয়াঃনাহ একদম সেরে গেছে
চলবে…………………


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মেঘে_ঢাকা_আকাশ - ০১

মেঘে_ঢাকা_আকাশ - ০২

মেঘে_ঢাকা_আকাশ - ০৩